ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

শ্যামাসুন্দরী খাল পুনরুদ্ধারে হাইকোর্টের নির্দেশ

শ্যামাসুন্দরী খাল পুনরুদ্ধারে হাইকোর্টের নির্দেশ

রংপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী শ্যামাসুন্দরী খাল দখল ও দূষণমুক্ত করতে এবং পুনরুদ্ধার নিশ্চিতে নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট।

সোমবার এক রুল জারি করে আদালত খালের সীমানা নির্ধারণ, দখলদার উচ্ছেদ, দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং সংরক্ষণের উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের নির্দেশ দেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়েরকৃত জনস্বার্থ মামলার প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

হাইকোর্টের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সিএস জরিপ ও মূল প্রবাহ অনুযায়ী শ্যামাসুন্দরী খালের সীমানা নির্ধারণ, দখলদার উচ্ছেদ, দূষণের উৎস চিহ্নিতকরণ, এবং খালের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে তিন মাসের মধ্যে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।

রংপুর জেলা প্রশাসক, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক, রংপুর পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও রংপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালককে আদালত তিন মাসের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

এই মামলায় বিবাদী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, রংপুর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক, রংপুর পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, রংপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এবং রংপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা।

বেলার পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট এস. হাসানুল বান্না এবং তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট তৌহিদুল আলম। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান।

প্রসঙ্গত, রংপুর জেলার কেল্লাবন্দ এলাকায় অবস্থিত শ্যামাসুন্দরী খাল একসময় ১৬ বর্গ কিলোমিটারজুড়ে প্রবাহিত ছিল। এটি রংপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা অতিক্রম করে ঘাঘট নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। তবে দখলদারিত্ব ও দূষণের ফলে খালের মূলধারা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে খালের জায়গা দখল করে দোকান, বসতবাড়ি ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও বর্জ্য ফেলার কারণে খালটির পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হয়েছে, যার ফলে এটি একটি পঁচা ডোবায় পরিণত হয়েছে।

বেসরকারি সংস্থা ডপস এর নির্বাহী উজ্জ্বল কুমার জানান, শ্যামাসুন্দরী খাল পুনরুদ্ধারে বেলার উদ্যোগ কার্যকর হলে রংপুর শহরের জলাবদ্ধতা হ্রাস পাবে। তাছাড়া এই খাল পুনঃজীবিত করতে অবৈধ দখল উচ্ছেদ এবং এ খালে পানির প্রবাহ যেন স্বচ্ছ থাকে সে ব্যাপারেও অধিকতর নজর দিতে হবে।

পরিবেশবিদ ও মাপার প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট মুনির চৌধুরী বলেন, "বিগত সময়ে এই খাল সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন আন্দোলন হয়েছে, কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। পরিকল্পনামাফিক কোনো উন্নয়ন কাজ না হওয়ায় শ্যামাসুন্দরী খালটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। বিগত সরকার অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রতা সাধন করেছে। এক সময়ের ৬০ ফুট চওড়া খালটি বর্তমানে ১০ থেকে ১৫ ফুটে এসে ঠেকেছে।"

তিনি আরও বলেন, "খালের বেশির ভাগই দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। আবার কোথাও কোথাও ভরাট হয়ে গেছে ময়লা-আবর্জনায়। যদি আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে এটি খাল পুনরুদ্ধারের প্রথম সফল প্রচেষ্টা হবে। মাত্র চার কোটি টাকা হলে তিন মাসের মধ্যে খালটি দখলমুক্ত ও দূষণমুক্ত করা সম্ভব।"

আবা/সজল

নির্দেশ,হাইকোর্ট,কর্মপরিকল্পনা,শ্যামাসুন্দরী,খাল,পুনরুদ্ধার
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত